শরীরের প্রয়োজন মাত্র 5 গ্রাম সুগার! বাকিটা কোথায় যায়?

আমরা সুগার প্রায় সব খাওয়ারেই পাই। কিছুটা মিষ্টি জীবনের একটা আনন্দদায়ক অংশ হলেও অতিরিক্ত সুগার শরীরকে বিপর্যস্ত করতে পারে।

তাহলে কী ঘটে যখন আপনি শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সুগার গ্রহণ করেন? আসুন বোঝার চেষ্টা করি।

ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ও ডায়াবেটিস এডুকেটর কানিক্কা মালহোত্রা বলছেন, জনপ্রিয় ধারণার বিপরীতে, শরীরের অতিরিক্ত সুগারের কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রয়োজন হয় না। তবে গ্লুকোজ আপনার শরীরের প্রাথমিক ফুয়েল হিসাবে কাজ করে। এই গ্লুকোজ মূলত আপনার খাদ্যের শর্করা থেকে আসে, এছাড়া কিছুটা লিভারও তৈরি করতে পারে।

ডাঃ মালহোত্রা বলছেন, আমাদের শরীরের প্রয়োজন মাত্র 5 গ্রাম সুগার, গ্লুকোজের আকারে। তবে, সুগার হজমের ব্যাপারটা শুধু এই সংখ্যা দিয়ে বোঝা যায় না। আসল কথা হলো শরীর কীভাবে সুগার ব্যবহার করে।

সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে, প‍্যানক্রিয়াস থেকে নিঃসৃত হরমোন, ইনসুলিন, গ্লুকোজকে কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। তারপর শরীর সেই গ্লুকোজকে শক্তি হিসাবে ব্যবহার করে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের ক্ষেত্রে, শরীর হয় ইনসুলিন তৈরি করে না ঠিকমতো, নয়তো কোষগুলো ইনসুলিনের কার্যকারিতায় সাড়া দেয় না। ফলে, রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়, একেই হাইপারগ্লাইসিমিয়া বলে।

অতিরিক্ত সুগার কোথায় যায়?

মালহোত্রা ব্যাখ্যা করছেন, যখন অতিরিক্ত সুগার গ্রহণ করা হয়, তখন শরীর সেই সুগারকে শক্তি হিসাবে ব্যবহার করার প্রাধান্য দেয়। যদিও লিভার কিছু গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেন আকারে সংরক্ষণ করে রাখতে পারে।

কিন্তু শরীরে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মাত্রায় সুগার থাকলে সেটা চর্বিতে রূপান্তরিত হয়। সেই চর্বি সারা শরীর জুড়ে সঞ্চিত হতে থাকে। তিনি বলছেন, এতে ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং কিছু কিছু ক্যানসারের মতো দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যসমস্যার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

কীভাবে গ্লুকোজ হোমিওস্ট্যাসিস বজায় রাখা সম্ভব?

গ্লুকোজ হোমিওস্ট্যাসিস বলতে শরীরের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রাখার জটিল প্রক্রিয়াকে বোঝায়। মালহোত্রার মতে, এই সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে ইনসুলিন ও গ্লুকাগন হরমোনগুলির পাশাপাশি লিভারের কার্যকারিতা এবং খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা থাকে।

তবে কিছু সুস্থ জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি সক্রিয়ভাবে স্বাস্থ্যকর গ্লুকোজ হোমিওস্ট্যাসিস বজায় রাখতে পারেন:

1. ভারসাম‍্যপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ করুন: পুষ্টিকর খাবারের ওপর নজর দিন যেমন ফল, সবজি, জটিল কার্বোহাইড্রেট (হোল-গ্রেন), চর্বিহীন প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। এগুলো দীর্ঘস্থায়ী শক্তি যোগায় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

2. স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন: অতিরিক্ত ওজন থাকলে ইনসুলিন প্রতিরোধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

3. নিয়মিত শরীরচর্চা করুন: শারীরিক পরিশ্রম শরীরকে গ্লুকোজ দক্ষভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে, ফলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে।

শরীর কীভাবে সুগার কাজে লাগায় তা বুঝে আপনি সচেতন খাদ্য নির্বাচন করতে পারবেন এবং একটি সুস্থ, ভারসাম‍্যপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারবেন। তবে পরামর্শের জন্য সর্বদা আপনার চিকিৎসকের  সাথে যোগাযোগ করুন।

সাস্থ্য সম্পর্কে এরকম আরও খবর পড়তে চোখ রাখুন সংবাদ সূত্র ওয়েবসাইটে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version