বাবা হওয়ার পরিকল্পনা? পুরুষদের উর্বরতা পরীক্ষার সম্পর্কে জানুন

পুরুষদের উর্বরতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। Photo Source: Freepik

উর্বরতার সমস্যা সাধারণত মহিলাদের সাথে জড়িত থাকলেও পুরুষদের উর্বরতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং বিশেষ উর্বরতা পরীক্ষার মাধ্যমে একজন পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের সম্পূর্ণ ছবি পাওয়া যায়। এই পরীক্ষাগুলি কেবল সম্ভাব্য সমস্যাগুলিই সনাক্ত করে না, বরং উর্বরতার চিকিৎসাতেও সহায়তা করে।

পুরুষদের উর্বরতা তাদের জীবনযাপন ও অভ্যাসের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রম, চাপ এবং পরিবেশগত দূষণ সবকিছুই শুক্রাণুর গুণগত ও পরিমাণগত মান প্রভাবিত করে। যেমন অসম্পূর্ণ খাদ্যাভ্যাস ও অতিস্থূলতা হরমোনের অসামঞ্জস্য ঘটাতে পারে। অপরদিকে, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে এবং টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। চাপ এবং ঘুমের অভাব হরমোনের মাত্রা ও শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে ফেলতে পারে। এছাড়াও, ধূমপান বা অধিক পরিমাণে মদ‍্যপান করলে শুক্রাণুর গুণগত মান পরে যেতে পারে।।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে পুরুষদের নিম্নলিখিত কিছু ফার্টিলিটি পরীক্ষা করা ভালো:

শুক্রাণু পরীক্ষা 

পুরুষদের উর্বরতা পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে প্রচলিত পরীক্ষা হল শুক্রাণু পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় শুক্রাণুর সংখ্যা, গতিশীলতা, আকার-আকৃতি এবং শুক্রাণু তরলের পরিমাণ বিবেচনা করা হয়। গতিশীলতা ও আকার-আকৃতিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ডিম্বানুর উর্বরতা বৃদ্ধি করতে শুক্রাণুগুলিকে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর গঠন থাকতে হবে। শুক্রাণু পরীক্ষার মাধ্যমে কম শুক্রাণু সংখ্যা, শুক্রাণুর নিম্ন গতিশীলতা এবং অস্বাভাবিক আকার-আকৃতি যা ফার্টিলিটিকে প্রভাবিত করে, তা শনাক্ত করা সম্ভব।

হরমোন পরীক্ষা

হরমোনের সঠিক সরবরাহ শুক্রাণু উৎপাদন এবং পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতার জন‍্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত হরমোন পরীক্ষায় টেস্টোস্টেরন ও ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH) এর মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।

টেস্টোস্টেরন অণ্ডকোষে তৈরি হয় এবং শুক্রাণু উৎপাদন ও যৌনক্ষমতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয়। টেস্টোস্টেরনের অভাব শুক্রাণু উৎপাদন কমিয়ে দিতে এবং পুরুষত্বহীনতার সমস্যা ঘটাতে পারে। অন্যদিকে, FSH পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নির্গত হয়ে অণ্ডকোষকে শুক্রাণু উৎপাদনে সহায়তা করে। FSH এর অস্বাভাবিক মাত্রা শুক্রাণু উৎপাদন সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।

এই হরমোনগুলোর পরিমাণ পরীক্ষা করে হাইপোগোনাডিজম বা অন্যান্য হরমোনগত সমস্যা শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

জিনগত পরীক্ষা

পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতাকে জিনগত বিষয়গুলোও প্রভাবিত করে। জিন পরীক্ষার মাধ্যমে ক্রোমোজোম বিকৃতি বা নির্দিষ্ট জিনগত ত্রুটি শনাক্ত করা যায়, যা শুক্রাণু উৎপাদনের কার্যকারিতায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম (অতিরিক্ত X ক্রোমোজম) অথবা Y ক্রোমোজমের ক্ষুদ্র অংশের অনুপস্থিতি উর্বরতাকে গুরুতরভাবে প্রভাবিত করে। এই ধরনের জিনগত সমস্যাগুলো শনাক্ত করা অতি গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে সম্ভাব্য চিকিৎসা বা অন্যান্য বিকল্পের দিকে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব

তাই সন্তান পরিকল্পনা করা পুরুষদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় উর্বরতার পরীক্ষা  করানো গুরুত্বপূর্ণ। জীবনযাত্রার সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে এবং যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নিলে সাফল্যজনক গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে। সুতরাং, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।

হেলথ ও লাইফস্টাইল সম্পর্কে এরকম আরও খবর পড়তে চোখ রাখুন সংবাদ সূত্র ওয়েবসাইটে। বিস্তারিত জেনে নিন এই খবরে।

Share This Article
Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version